আমাদের আজকের লিখেছে হচ্ছে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার নিয়ে। আমরা অনেকে হয়তো জানি না ভিটামিন ডি কোন কোন খাবার গুলোতে রয়েছে। আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা হতে পারে।
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার |
মানুষের শরীরটা আসলেই পেশির উপর নির্ভরশীল করে চলাফেরা করে। আর এই পেশির যতনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর পেশির যত্ন নিতে হলে সব সময় আপনাকে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
সূর্যের আলো থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে সহজ আর দ্রুত কাজ করে সূর্যস্নান। নিয়মিত বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ১৫ মিনিট সূর্যস্নান করা গেলে শরীরের ৭০ ভাগ ভিটামিন ডি-র চাহিদাই পূরণ হয়ে যায়।আমাদের শরীরে জাতীয় ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা না দেয় সে বিষয়ে সব সময় নিজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের শরীরে যখন ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেবে তখন আমরা আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখতে পাবো। তবে শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে খাবারের প্রয়োজনীয়তাও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে শরীরে নানা উপসর্গ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।বিশেষজ্ঞরা অনেকগুলো সমস্যার কথা বলেছেন ডি এর ঘাটতি যখনই দেখা দেবে তখনই এই সমস্যাগুলো দেখতে পাবেন। নিচে অনেকগুলো সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো।
ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
১) যখনই দেখবেন আপনার মাথার চুল পড়া শুরু করেছে তখনই বুঝতে পারবেন ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিয়েছে আপনার শরীরে। চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রয়েছে।কারণ যখনই শরীরে ভিটামিন ডি এর আবার বেশি হবে তখনই চুল পড়া শুরু করবে অটোমেটিক ভাবে।
২)ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে নানা রকমের সমস্যা হয়। হাড়, পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা, অস্থিসন্ধির বিকৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা সাধারণত এসব হওয়ার একটাই কারণ সেটি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর অভাব এর জন্য।
৩) আমাদের শরীরে যখনই ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘনঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।ভিটামিন ডি এর অভাব বুঝতে পারার জন্য এটি একটি কারণ। এই কারণটির মাধ্যমে অতি সহজে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি বুঝতে পারব।
৪) অনেক সময় আমরা ভালো খাবার সব কিছু খাওয়ার পরেও আমাদের শরীরটা যেন কেমন কেমন জানি লাগে।দেখা গেল যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি আপনি অলস এবং ক্লান্তিবোধ করেন, তবে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি-র অভাব রয়েছে।তাই অতি দ্রুত আপনার শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করুন।
৫) ভিটামিন ডি এর ঘাটতি মানুষকে অনেকটা দুর্বল করিয়ে দেয়। অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়াকেও ভিটামিন ডি-র ঘাটতি বলে মনে করা হয়। কিংবা হঠাৎ ওজন কমতে থাকা, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ার পরও ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণও ভিটামিন ডি-র অভাবের ঘাটতি হতে পারে।
৬) শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে আমাদের শরীরে কাটা স্থানগুলো শুকাতো অনেক বেশি দেরি লাগে। শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমতে শুরু করে। এ কারণে ঘা শুকাতেও অনেকটাই সময় লেগে যায়।ভিটামিন ডি এ চাহিদা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৭) আমাদের শরীর মাঝে মাঝে সবকিছু ঠিক থাকার পরেও অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে-বসে থাকার ইচ্ছে হতে পারে। শরীরের এমন লক্ষণটি ও কিন্তু ভিটামিন ডি এর ঘাটতি।
৮) ভিটামিন ডি এর অভাবে থাইরয়েডে সমস্যা, মেরুদণ্ডের ব্যথা ও অসময়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে শরীরে। ভিটামিন ডি এর অভাব শরীর থেকে দূর করতে হবে।
৯) আমাদের শরীর থেকে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করতে হবে। ভিটামিন ডি-র অত্যাবশ্যকীয় অভাবে পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে। এ ছাড়াও গাঁটে ব্যথা এবং বৃদ্ধরা বাতের সমস্যায় ভোগেন।পায়ের হাড় গাঁটে ব্যাথা অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক।
১০) ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ, বড়দের অস্টিওমিলেশিয়া এবং বয়স্কদের হাড়জনিত ক্ষয় রোগ হয়।আর এসব রোগের বড় কারণ গুলো হওয়ার একমাত্র কারণটি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর অভাবের জন্য।
এসবের সমস্যা থেকে আপনি অতি সহজে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন কিছু খাবারের মাধ্যমে যে খাবার গুলোতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।ভিটামিন ডি রয়েছে বেশি পরিমাণে সে খাবারগুলো নিচে দেওয়া হল।
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি
১)ডিম
ডিম একটি সুস্বাদু খাবার। ডিম খাওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে প্রথমেই যে খাবারটির কথা বলা যায় সেটি হলো ডিম। এটি ভিটামিন ডি-র একটি উৎকৃষ্ট উৎস।আপনার শরীর থেকে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে কমপক্ষে প্রতিদিন একটি করে ডিম খান।
২) দুধ
দুধ খাবারটি তরল জাতীয় খাবার। কিন্তু এই দুধে ভিটামিন ডি রয়েছে। দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। খাবারের ছয়টি উপাদানের পাশাপাশি গরুর দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।শরীর সুস্থ রাখতে এবং ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে নিয়মিত দুধ খান।
৩) দই
দই হচ্ছে তরল জাতীয় এবং ঠান্ডা খাবার। দই অতি সহজে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করবে। সহজে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে ডায়েটে রাখতে পারেন দইও। পেটের সুরক্ষায় আর গরম থেকে স্বস্তি পেতে নিয়মিত শিশুকে দই খাওয়ানো উচিত।
৪) কমলা
কমলাতে আছে ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রতিদিন একটি করে কমলা খেতে পারেন।ভিটামিন ডি-র জন্য প্রতিদিন একটি কমলাও খেতে পারেন। এতে একই সঙ্গে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।ভিটামিন সি ও কিন্তু এই কমলা থেকে পাওয়া যায়।
৫) মাশরুম
ভিটামিন ডি এর আরো একটি উৎস হল মাশরুম।অতি বেগুনি রশ্মিতে রাখলে মাশরুম ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি একমাত্র অপ্রাণিজ খাদ্য যেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি মেলে।
ভিটামিন ডি যুক্ত মাছ
৬) ফ্যাটি ফিশ
সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি এর উৎস। টুনা, ম্যাকরেল, স্যালমন সামুদ্রিক জাতীয় মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পুরণ করতে সামুদ্রিক মাছগুলো খেতে পারেন।
৭) কড লিভার অয়েল বা মাছের তেলে
শরিলে ভিটামিন ডি এর অভাবের চাহিদা পূরণ করবে কড লিভার অয়েল বা মাছের তেলে। এই গুলোতে রয়েছে বেশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ওমেগা থ্রি এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ করার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ রাখে আপনার হার্টকেও।তাই শরীরের হার্ট এবং শরীরের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করার জন্য কড লিভার অয়েল বা মাছের তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮) কলিজা
গরুর কলিজাতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।কলিজাতে অনেক প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।কলিজা হচ্ছে আয়রনের সেরা উৎসব। তাছাড়া এটিতে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও প্রোটিন থাকেন। গরুর কলিজাতে আয়রনের উৎসবটা বেশি। তাই শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য গরুর কলিজা খান। তবে বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি
৮) শাকসবজি
শাকসবজিতে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে ভিটামিন ডি এর উৎস। তাই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য কিছু শাক সবজি রয়েছে যেগুলো ভিটামিন ডি দ্বারা ভরপুর। এর মধ্যে কয়েকটি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ শাক সবজি হলো ব্রকলি এবং কপি। ব্রকলিতে সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি এবং শাক এবং সবজি হিসেবে পরিচিত কপি ভিটামিন ডি হিসেবে বেশ উপকারি। উক্ত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ শাক-সবজিগুলো আমাদের শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।তাই শাকসবজি ভিটামিন ডি এর চাহিদা অতি সহজে করে থাকেন। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখবেন।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ট্যাবলেট এর নাম
নিচে কয়েকটি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ট্যাবলেটের নামটা হল। পুরো বাংলাদেশ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন দি ট্যাবলেটগুলো খুবই জনপ্রিয়।
১) Calbo-D
২) Caldical-D
৩) Calbon-D
৪) Calcin-D
আমাদের শেষ কথা
আশা করি আজকের লিখাটি আপনাদের উপকারে আসবে। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ সবাই ভাল থাকবেন।