আমাদের আজকের লিখে হচ্ছে আনারসের উপকারিতা নিয়ে। আনারস নিয়ে এবং আনারসের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেক আনারস খেতে চায় না। আজকে আনারসের যে উপকারিতাগুলো রয়েছে সে সম্পর্ক গুলো বললে অনেকে আনারস খাওয়ার জন্য আরো বেশি অনুপ্রাণিত হবেন।
আনারসের উপকারিতা |
আনারস হচ্ছে রসালো এবং একটি মজাদার ফল। আনারস ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি।আরো আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। রসালো ফলটি মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ক্যালরি রয়েছে। চলুন আনারস ফলটির গুনাগুন জেনে নেওয়ার জন্য।
আনারসের উপকারিতা
১) পুষ্টির অভাব পূরণে
আনারস ফলটি পুষ্টির অভাব পূরণ করে। আনারস ফলটিতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস। এসব পুষ্টি গুণ গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব পুষ্টি গুণ গুলো আমাদের শরীরের পুষ্টির বিভিন্ন অভাবের চাহিদা পূরণ করেন।
২) হজম শক্তিতে উন্নতি করতে
আনারসের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেন। আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা আমাতের হজমশক্তিকে উন্নতি করতে সাহায্য করেন। তাই যাদের বদহজম অথবা হজমজনিত যেকোনো সমস্যাটির জন্য মুক্তি পাওয়ার জন্য আনারস খাওয়া যেতে পারে। এতে করে আপনার বদহজম অথবা হজমজনিত আর কোন সমস্যা থাকবে না।
৩) ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধে
আনারস ফলটিতে ব্যাপক পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধের ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া জ্বর ও জন্ডিস দূর করার জন্য আনারস ফলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পালন করেন। যাদের নাক দিয়ে পানি পড়ে ,গলা ব্যথা, ব্রঙ্কাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস খাওয়া যেতে পারে।
৪) শরীরের ওজন কমাতে
আনারস শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করেন। আনারস আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আঁশ আছে। তাছাড়া এতে কোন ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস খেলে বা আনারসের রস খেলে কিংবা আনারসের জুস খেলে শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। আর আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার শরীরের ওজন কমানোর জন্য আনারস ফলটি।এই ফলটি শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।ফলে শিরা ধমনির মধ্যে দিয়ে সমস্ত শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।
৫) দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায়
দাঁত এবং মাড়ি সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন পরে।আরে ক্যালসিয়াম আছে আনারসে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতের জীবাণু সংক্রমণ কম হয় ফলে দাঁত থাকে সুস্থ। এবং দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখার জন্য আনারস ফলটি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দাঁতের মাড়ি সুস্থতার জন্য আনারস ফলটি খেতে পারেন।
৬) চোখের যত্নে আনারস
চোখের সুস্থতার জন্য আনারস খেতে পারেন। আনারস ফলটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার রোগ ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন রোগটি হওয়ার থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন। আনারস আছে বেটা ক্যারোটিন। আনারস খাওয়ার পরে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।আর এই ফলটি খাওয়া পরে আমাের চোখ থাকে সুস্থ। তাই আনারস খান চোখের সুস্থতার জন্য।
৭) ত্বকের যত্নে আনারস
আনারস আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি যা আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। ফলটিতে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। এছাড়া আমাদের শরীরের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের বেশ কদর রয়েছে। তাই ত্বকের যত্ন নিতে আনারস খেতে পারেন।
৮) হাড়ের সমস্যাজনিত রোগ প্রতিরোধ
আনারস খাওয়ার উপকারিতা আনারসে ব্যাপক পরিমাণে ক্যালোরি থাকার কারণে আমাদের শরীরে হাড় গঠনে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেন। শরীরের হারগুলো সুস্থ রাখার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। আরে ক্যালসিয়াম আনারস থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া আনারসে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হারকে গড়ে তোলে অনেক বেশি মজবুত। তাই আপনার খাদ্যতালিকাতে আনারস ফলটি রাখতে পারেন। আনারসের থাকা ক্যালসিয়ামটি হাড়ের সমস্যা জনিত রোগ প্রতিরোধ করবে।
৯) ক্রিনিনাশক হিসাবে
ক্রিনিনাশক হিসাবে আনারসের রস ভালো কাজ করেন। নিয়মিত আনারসের রস খাবার মাধ্যমে কৃমির উৎপাদন বদ্ধ হয়ে যায়। এই কৃমি দূর করতে হলে আপনাকে সকালবেলা খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। আনারস ফল খাওয়ার মাধ্যমে এটা অনেক সহজে দূর হয়ে যাবে।
১০ ক্যান্সার প্রতিরোধী
ফ্রি-রেডিকেল বা মুক্ত মুলক মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে।আনারসের মাধ্যমে মরণ নামক ক্যান্সার রোগটি কিছুটা দূরে সরিয়ে দেন। দেশী আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি এবং পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল বা (মুক্ত মুলক) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধতে বাধাগ্রস্থ হয়।আনারস ফল আমাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের সবার আবারস ফলটি খাওয়া।
আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা
আনারসের অপকারিতা -আনারসের অপকারিতা কি?
আনারসের কিছু অপকারিতা আছে। তবে অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি। আনারস খাওয়ার ফলে অনেকের শরীরে এলার্জি চুলকানি দেখা দেয় এবং শরীরে ফুসকুরি দেখা দেয়।আনারস ফলটিতে ব্যাপক পরিমাণে মিষ্টি থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই মারাত্মক। আনারস ফলটি হচ্ছে অ্যাসিটিক ফল। তাই খালি পেটে খেলে পেট ব্যথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়
গর্ভ অবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে কিনা তার বিস্তারিত আমরা এখন আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আমাদের দেশে কিছু মিথ্যা কিছুকথা প্রচলন রয়েছে। তারমধ্যে নাকি গর্ভ অবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না। গর্ভ অবস্থায় আনারস খেলে নাকি এবোরশন হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যে মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে করে এবোরশনের কোন প্রমাণ কোন প্রমাণ এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের হাতে নেই।
আনারস অন্যান্য ফলের চাইতে স্বাস্থ্যকর এবং ফাইবার থাকায় গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে।
গর্ভাবস্থায় আপেল, কমলা, আম, আনারস, তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এমনিভাবে পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে। পাকা পেঁপে খাওয়াতে গর্ভাবস্থায় কোন সমস্যা হবে না। তবে কিন্তু কাঁচা পেঁপে,আদা কাঁচা পাকা পেঁপে ল্যাটেক্স প্রোডাক্ট থাকায় গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণভাবে আনারস খাওয়া যাবে। গর্ভ অবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না এটা কি মিথ্যা কথা প্রচলন।
আনারস খেয়ে দুধ খেলে কি হয়
আনারসের উপকারিতা |
ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে এসেছি আনারস খেয়ে দুধ খেলে অথবা আনারস দুধ একসাথে খেলে মানুষ নাকি মারা যায় এটা সম্পূর্ণ একটি মানুষ বানানো মিথ্যা কথা।
আনারস এবং দুধ একসাথে খাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে সম্প্রতি এ বিষয়ে কথা বলেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা কামাল।
ডাক্তার মোস্তফা কামাল বলেন গরুর দুধের সাথে আনারস খেলে কোন সমস্যা হয় না। ডাক্তার মোস্তফা কামাল আরো বলেন নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধ আর আনারস একত্রে খেলে সেটি ক্ষতিকর হয়। কারণ নষ্ট দুধে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা আনারসের ব্রোমেলেইনের সাহায্য নিয়ে দুধকে বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। আর নষ্ট দুধ কোনো সুস্থ মানুষ খায় বলে আমার মনে হয় না।
ডক্টর মোস্তফা কামাল সুনিশ্চিতভাবে ঘোষণা করে দিয়েছেন দুধ আনারস একসঙ্গে খাওয়া যাবে। এটাতে তেমন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। তবে পাশ্বপক্রিয়া হিসাবে অ্যাসিডিসি বা পেটে একটু ব্যথা হতে পারে।
আনারসে কোন এসিড থাকে
অনেকে জানেনা পাকা আনারসে কোন এসিড থাকে। পাকা আনারসে ইথাইল এসিটেট থাকে।
আমাদের শেষ কথা
আমাদে আজকের লিখাটি ছিল আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।আনারস সবার জন্য খুবই সুস্বাদু একটি ফল। এই ফলটি সবার জন্য স্বাস্থ্যকর। এটি শরীরের জন্য খুব কার্যকারী একটি ফল। তাই আমাদের সবার উচিত আনারস ফলটি খাওয়া।