আমাদের আজকের লিখাটা হচ্ছে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে। গর্ভ হচ্ছে নারী-জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এসময়ে নারিকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। এবং বিভিন্ন রকমের খাদ্য খেতে হয় সন্তান গর্ভে সুস্থ থাকার জন্য এবং নিজে সুস্থ থাকার জন্য। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না গর্ভে থাকা অবস্থায় খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাবারগুলো রাখা উচিত। আজ আমরা সেই বিষয়ে কথাবার্তা বলব।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা |
একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশ্রাম ব্যায়াম এবং খাদ্য সম্পর্কে সকলের জানা উচিত। গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা অনেকটা খাদ্য উপর নির্ভর করে। তাহলে চলুন গর্ভ অবস্থায় কোন কোন খাবার গুলো গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা করে রাখবেন।
নিচে গর্ভবতী মায়ের জন্য যে খাবারগুলো রাখবেন তা দেওয়া হল।আমরা গর্ভবতী মায়ের জন্য ১৩ টি খাবার নিয়ে আলোচনা করব।আর এই ১৩টি খাবার অবশ্যই গর্ভবতী মায়ের জন্য রাখবেন।তাহলে জেনে নিন সেই ১৫ টি খাবার গুলো।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
১) মুরগির ডিম
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন প্রোটিন। ভিটামিন এ, বি২,বি৬,বি১২,ডি,ই কে এবং ফসফরাস, ক্যালসিয়াম জিংক রয়েছে। হাঁস আর মুরগির মধ্যে রয়েছে প্রোটিনের অসম্ভব উৎসব। তাই আপনাকে আপনার খাবারের তালিকাতে মুরগির ডিম থাকতে হবে। গর্ভ অবস্থায় ডিম,হাঁস-মুরগির মাংস সুস্থ বিকাশকে নিশ্চিত করে। তাই সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো রাখেন।
২) শাকসবজি
এমনিতে শাকসবজি প্রতিটা মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাকসবজিতে রয়েছে বেশি পরিমাণে ভিএামিন।বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আছে। সেখান থেকে শাক সবজি গুলো রাখবেন ব্রোকলি,পালংশাক, গাজর,কুমড়া,মিষ্টি আলু,টমেটো,ভুট্টা বেগুন বাঁধাকপি। এরকমের সবজিগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাকে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় এসব শাকসবজি রাখতে হবে।
৩) বাদাম ও বীজ
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় বাদাম বীজ রাখতে হবে। কেননা বাদাম বীজ খাদ্যটি রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ফ্লাভোনয়েত এবং ডায়েটারি ফাইবার।বাদাম বীজ খুবই পুষ্টিকর খাবার সবার জন্য।তাই গর্ভবতী মাকেও বাদাম বীজ খাওয়াতে পারেন। এটাতে কোন রকমের সমস্যা হবেনা।
৪) মাছ
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় মাছ রাখতে হবে। কেননা মাছে রয়েছে প্রোটিন এবং কম চর্বিযুক্ত। এটি ওমাগো ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ভিটামিন বি২, ডি, ই এবং পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক,আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাসের মত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের একটি সঠিক উৎসবের খাবার। কম চর্বিযুক্ত মাছ খাবার তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে।
৫) দুগ্ধজাত পণ্য
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাতে দুধ ও টক দই রাখতে পারেন।দুগ্ধজাত পণ্য, বিশেষ করে ফোর্টিফাইড দ্রব্যাদি ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি প্রোটিন স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফলিক এসিডের একটি সঠিক উৎস।তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় দুগ্ধজাত পণ্য রাখুন।
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
৬) হোল ব্রেইন বা গোটা শস্য জাতীয় খাবার
আর এই গোটা শস্য জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটারি, ফাইবার রয়েছে খনিজ পদার্থের স্বাস্থ্যকরের উৎসব। আর গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য এগুলো অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। তাছাড়া হোল গ্রেইনের উদাহরণ হল যব,বাদামী চাল,বাজরা, ওটমিল ইত্যাদি। এসব খাদ্য গর্ভবতী মায়ের জন্য অতি প্রয়োজন। মায়ের খাদ্যের উপর নিশ্চিত করবে একটা শিশুর বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা।
৭) মিষ্টি আলু বা রাঙ্গা আলু
অনেক গর্ভবতী মা রাঙ্গা আলু, লাল আলু খেতে চায় না। কিন্তু একটা গর্ভবতী নারীর জন্য লাল আলু, মিষ্টি আলু খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার। লাল আলু, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে।এটি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া এক ধরনের যৌগ যা মানব শরীরে ভিটামিন এ পরিণত করে। রাঙ্গা আলুতে বেশি পরিমাণে ফাইবারও পাওয়া যায়।যা কিন্তু একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন।
৮) চর্বিহীন মাংস
চর্বিহীন মাংস একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন আছে। কেননা চবির্হীন মাংস শরীরে উচ্চমানের প্রোটিন যোগায়।নানা ধরনের রেড মিটে আয়রনের পরিমান বেশি থাকে যা শরীরের রক্ত গাঢ় হতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় চবির্হীন মাংস রাখতে হবে।
৯) অ্যাভোকাডো ফল
অ্যাভোকাডো ফল মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।অ্যাভোকাডো ফলে রয়েছে অনেক ভিটামিন। ভিটামিন ডি,ভিটামিন কে,ভিএামিন ই,ভিটামিন সি,ফাইবার,পটাশিয়াম, তামা থাকে। এই ফলটা মাখনের মত হয় এবং কোন ও রান্নায় দিলে এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। একটি অ্যাভোকাডো ফলে ১০ গ্রামের ফাইবার থাকে।ফাইবার আমাদের খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে।
গর্ভবতী মায়ের খাবার
১০) শুকিয়ে নেওয়া ফল
শুকিয়ে নেওয়া ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার,বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এক টুকরা ড্রাই ফ্রুটে একটা তাজা ফলের শক্তি রয়েছে। ফলটা শুধু জল ছাড়া হয়।একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় শুকিয়ে নেওয়া ফল রাখতে পারেন। যে ফলগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই ভালো।
১১) মাছের তেল
মাছের তেল মাছের যকৃৎ থেকে প্রাপ্ত তেল ও শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারি।মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড EPA ও DHA থাকে।এগুলো মস্তিষ্কের জন্য এবং চোখের পোস্টের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই খাদ্য তালিকায় মাসের যকৃৎ থেকে প্রাপ্ত তেল রাখা যাবে।
১২) ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার
খাদ্য তালিকায় ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। এই ধরনের খাবার গুলো সাধারণত টক জাতীয় বা সাইট্রাস ফল। মটরশুঁটি, মুটর,ডাল, চাল এবং ফোর্টিফাইড সিরিয়াল জাতীয় খাবার।ভ্রণের প্রাথমিক বিকাশের সময় ফলিক এসিড নিউরাল টিউব গঠনে সাহায্য করে। ফলিক এসিড গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্ক ( এনেনসেফালি) এবং মেরুদন্ডের ( স্পাইনা বিফিডা) কিছু বড় জন্মগত ক্রটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনি ফোলিক এসিড সম্পূরক ( সাপ্লিমেন্ট) গ্রহণ করলেও খাদ্য তালিকায় ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার তারপরও রাখতে হবে অবশ্যই।
১৩) আয়োডিন যুক্ত লবণ
গর্ভ অবস্থায় আয়োডিন যুক্ত লবণ ব্যবহার করুন। আয়োডিনযুক্ত লবণ গর্ভে থাকা শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের সহায়তা করে। আর বিশেষ করে গর্ভ অবস্থায় কিসের শরীরের পরিবর্তন ঘটে। যেমন হরমোনের কারণে অসুস্থবোধ মেজাজে পরিবর্তন ক্লান্তি ভাব এইগুলো দেখা দিবে।নিয়মিত বিশ্রাম নিন, খাবার খান স্বাস্থ্যকর, বেশি পরিমানে পানি পান করুন। হালকা ভাবে একটি একটু ব্যায়াম করুন। কোন টেনশন করবেন না। সব সময় মানসিক চাপমুক্ত থাকুন।
১৪) কড লিডার ওয়েল
কড লিডার ওয়েল ওয়েল ওমেগো ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যা ভ্রূনের মস্তিষ্ক এবং চোখের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এটিতে ভিটামিন ডি ও থাকে।যা প্রিক্ল্যাম্পশিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।তাই খাবার তালিকায় কড লিডার ওয়েল রাখুন।
১৫) পানি
সর্বশেষ খাবারটি হচ্ছে বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া। শরীরকে যথাসম্ভব হাইড্রেটেড রাখা একান্ত জরুরী প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই এমনতো অবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত।
আমাদের শেষ কথা
এই ছিল আমাদের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে পোষ্ট।একজন গর্ভবতী মায়ের সঠিক খাদ্য খাওয়ার উপর নির্ভর করে তার গর্ভে থাকা সন্তানের সুস্বাস্থ্য। আশা করি আজকের পোষ্টটি থেকে জেনে গেছেন একজন গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা সম্পর্কে। আশা করি আজকের লিখাটি আপনাদের উপকারে আসবে।সবাই ভালো থাকবেন।আল্লা হাফেজ।