আপনার চার্সঃ নখ কামড়ালে কী হয়? নখ কামড়ানোর অভ্যাস দূর করার উপায়। কেন নখ কামড়ায়? নখ ভালো রাখার উপায়।নখ কাটা বা নখের যত্ন। নখের চিকিৎসা নখ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ। নখে নেলপলিশ ব্যবহার।নখ কামড়ানো অভ্যাশ ত্যাগ করার টিপস। নখ ভালো রাখার টিপস
আমাদের আশেপাশে ছোট বড় এমন অনেকেই আছেন যারা কারণে-অকারণে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কেটে কেটে সে গুলোকে দফারফা করে ফেলেন।
• নখ কামড়ানো মানসিক রোগ
যারা নখ কামড়ান তারা সচেতন ভাবে নয় বরং অভ্যাসবশত এমনটা করে থাকেন। একে এক ধরনের মানসিক ব্যাধি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অনিকপেইসি বা অনিকপেইসিয়া বলা হয়। নখ কামড়ানো অনেক ক্ষেত্রে মানসিক চাপ অশান্তি ও উদ্বেগের লক্ষণ হতে পারে।
• কাদের এই অভ্যাস থাকতে পারে?
নেলবাইডিং ইটিওলজি কনসিকোয়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক প্রকাশনায় বলা হয়েছে। সাধারণত যেসব শিশুর মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা এটেনশন ডেফিসিট হাইপেরাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার, সংক্ষেপে এডিএইচডি দেখা দেয় তাদের অনিকপেইসিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
সেই সাথে অপসিশনাল ডেবিং এন্ড ডিসঅর্ডার ওডিটি থাকলে, অর্থাৎ শিশুর বেশি রাগ, খিটখিটে মেজাজ কিংবা জিগাংসা পরায়ন হলে, সেই সাথে প্রিয়জন ছেড়ে চলে যাচ্ছে এমন উদ্বেগজনিত সমস্যা সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আবার যাদের শুচিবায়ু জনিত সমস্যা অফসিসের কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ওসিডি কিংবা ইনপালসিভ কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার অর্থাৎ কোনো বাজে অভ্যাস এড়ানোর নিয়ন্ত্রণ তাগিদ বা প্রতিরোধের ক্ষমতা না থাকলে, দাঁত দিয়ে নখ কাটা সমস্যায় ভোগার ঝুঁকি বেশি থাকে।
এই অভ্যাস -এ আক্রান্ত মানুষের মুখ প্রতিনিয়ত নখ কাটার জন্য শিরশির করতে থাকে, কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। নখ কামড়ানো পর তারা মানসিক প্রশান্তি পান। সাধারণত তিন থেকে চার বছর বয়সী শিশুরা নখ কামড়াতে শুরু করে যা বয়সন্ধিকালে বাড়তে পারে। পরে বড় হওয়ার সাথে সাথে সেটা ঠিকও হয়ে যায়।
তবে অনেকের মধ্যেই এই অভ্যাস বড় হওয়ার পরেও থাকতে পারে, আবার প্রাপ্তবয়স্ক অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে এই অভ্যাস দেখা দিতে পারে।
• নখ কামড়ালে কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে?
মুখ দিয়ে ক্রমাগত নখ কাটার কারণে হাতের নখ, নখের গোড়ায় থাকা কিউটিকাল এবং নখের আশেপাশে চামড়ায় বড় ধরনের প্রদাহ হতে পারে। যারা ক্রমাগত নখ কামড়ান তাদের নখের অংশে ভয়াবহ ইনফেকশন এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিসাধন হতে পারে। নখের টিস্যু বারবার ছিঁড়ে ফেলায় নখগুলো এবড়োখেবড়ো হয়ে বেড়ে উঠে, যা দেখতে একদমই ভালো লাগে না।
এই অভ্যাসের কারণে মুখে থাকা নানা ধরনের জীবাণু হাতের মাধ্যমে শরীরে অন্য অংশে যেমন: শরীরের, চামড়া, মুখ, দাঁত, পাকস্থলীতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এমন সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
• নখ কামড়ানো এড়াতে কিছু টিপস
নখ কামড়ানোর অভ্যাস এড়াতে কিছু উপায় কথা বলেছে আমেরিকান অ্যাক্যাডেমি অফ টরমাটলজি এসোসিয়েশন
১/ সবার আগে দুই হাতের নখ ছোট করে কেটে ফেলতে হবে, নখ ছোট থাকলে চাইলেও বেশি কামড়ানো যাবে না। সেগুলো কামড়াতেও মন উশখুৃশ করবে না।
২/আরেকটি উপায় হতে পারে নখে স্বচ্ছ রং এর বিদঘুটে স্বাদের নেলপলিশ ব্যবহার করা। এ নেলপলিশ গুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেগুলো মুখে গেলে কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু এর বিদঘুটে স্বাদের কারণে মানুষ বাধ্য হয় মুখ থেকে নখ দূরে রাখতে।
ক্ষতিগ্রস্ত নখ ঠিকঠাক করতে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেই সাথে নিয়মিত হাতের নখ পরিষ্কার রাখা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় পার্লারে গিয়ে মেনিকিউর করালে। কারণ নখ যদি দেখতে সুস্থ, সুন্দর ও পরিপাটি হয় তাহলে অনেকে সেটা কামড়ে নষ্ট করতে চাইবেন না।
৩/আবার বড় ছোট সবাই হাতে গ্লাভস পড়ে, কিংবা আঙ্গুলে টেপ, ব্যান্ডেজ বা স্টিকার লাগিয়ে নিজেকে নখ কামড়ানো থেকে প্রতিরোধ করতে পারে।
৪/ সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হতে পারে অন্য কোন ভাল অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলে। এভাবে নখ কামড়ানোর অভ্যাস বদলে ফেলতে পারবেন। যেমন যখনি নখ কামড়াতে ইচ্ছে করবে তখন আপনি স্ট্রেস বল চাপতে পারেন, স্লাইম বা প্লেরো দিয়ে খেলতে পারে। কিংবা ফিজেট স্পিনার ঘোরাতে পারেন। এর সবকয়টি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে তেমনি আপনার হাতকে ও মুখ থেকে দূরে রাখবে।
৫/ অনেকে আছেন বিশেষ কিছু সময়ে যেমন: কোন কিছু মনযোগ দিয়ে দেখলে বা শুনলে, টেনশন করলে, কোন খারাপ খবর জানলে, কোন কিছু হারিয়ে গেলে, ক্ষুধা পেলে, মানসিক উদ্বেগেরবশে, এমনকি একঘেয়েমি লাগলেও নখ কামড়াতে থাকেন। আপনার ক্ষেত্রে এই নখ কামড়ানোর পিচনে ঠিক কোন কোন কারণগুলো দায়ী সেগুলো খুঁজে বের করুন।
চেষ্টা করুন ঐকারণ গুলোকে কিভাবে এড়ানো যায় বা ঠিক করা যায় সেটা বের করতে। আপনি যখন কারণ জানতে পারবেন তখন আপনি অনেকটাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আবার অনেক চিকিৎসকরা ধীরে ধীরে এ অভ্যাস থেকে পরিত্রাণের কথা বলছেন। যেমন: আপনি প্রথমে এক হাতের একটি বিশেষ আঙ্গুলের নখ কামড়ানো বন্ধ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সফলতা পেলে আর একটি আঙ্গুল কামড়ানো বন্ধ করুন, এভাবে আরেকটি, পরিশেষে ১০ আঙ্গুলের নখ কামড়ানো বন্ধ করা আপনার জন্য অনেক সহজ হবে।
তবে জার্নাল অব মুড ডিসঅর্ডার বলা হয়েছে। এই উপায় গুলো অনেকের ক্ষেত্রে কাজে নাও দিতে পারে, সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে চেষ্টার পরও ব্যর্থতার কারণে অনেকেরই এই অভ্যাস আগের চাইতে বেড়ে গিয়েছে।
সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। তাদের দেয়া কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, এক্সেপ্টেন্স কমিটমেন্ট থেরাপি, সেইসঙ্গে অভ্যাস পরিবর্তন এর কিছু প্রশিক্ষণ বা হ্যাবিটস রিভার্সসেল ট্রেনিংও বেশ কার্যকর হতে পারে।
• টপিক ট্যাগ
নখ কামড়ালে কী হয়?
নখ কামড়ানোর অভ্যাস দূর করার উপায়
কেন নখ কামড়ায়?
নখ ভালো রাখার উপায়
নখ কাটা বা নখের যত্ন
নখের চিকিৎসা
নখ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ
নখে নেলপলিশ ব্যবহার
নখ কামড়ানো অভ্যাশ ত্যাগ করার টিপস
নখ ভালো রাখার টিপস