• স্ক্রিন টাইম
স্ক্রিন টাইম বলতে আসলে কি বোঝায় সহজ কথা যদি বলি তাহলে স্ক্রিন টাইম হচ্ছে কোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে আপনি যতটা সময় ব্যয় করছেন ঠিক ততটা সেটা হতে পারে টেলিভিশন দেখা সিনেমা বা ভিডিও দেখা গেমস খেলা বা কম্পিউটার ব্যবহার করা ট্যাবলেট বা ফোন ব্যাবহার করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম করাও হতে পারে
কিন্তু কিভাবে বুঝবেন যে আপনি বা আপনার পরিবারের কোন সদস্যে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে কিনা? এ জন্য কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পারেন যেমন: পরিবারের সদস্যরা মিলে কোন একটি কাজ করতে গেলে সেখানে কি স্ক্রিন টাইম কোন ধরনের সমস্যার তৈরি করছে? এর কারণে কি আপনার ঘুমে কোন সমস্যা হচ্ছে? টিভি দেখা বা ফোন ব্যবহার করার সময় কি আপনি খাবার খাচ্ছেন?
যদি এসব প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার পরিবারে স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে নেই আর এই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কি সমস্যা হয়? আর সেগুলো কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় জানতে হলে সাথে থাকুন।
• স্থূলতা বৃদ্ধি
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের গবেষণা বলছে ডিজিটাল প্রযুক্তি বা স্ক্রিনের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করলে বাইরে যাওয়া বা শারীরিক কর্মকাণ্ড এর পরিমাণ কমে যায় শিশুরা বাইরে খেলা বা দৌড়াদৌড়ি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে যার কারণে শিশু এবং তরুণদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধিত শারীরিক স্থূলতা বৃদ্ধি সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
• দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে যাওয়া
শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক বয়স যেমনই হোক না কেন বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্মার্টফোন গেমিং কনসোল বা ডিভাইস কম্পিউটার ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটে বেশি সময় কাটালে তা দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে
এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে শিশু এবং কম বয়সীরা তাদের মধ্যে মায়োপিয়া নামে এক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যার কারণে দূরের জিনিস দেখতে ঝাপসা মনে হয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডিভাইসে মুখ গুঁজে থাকা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত সময় ধরে না থাকানোর কারণে এমনটা হচ্ছে।
• শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে বাধা
যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে চার হাজার শিশুর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যেসব শিশুরা দু'ঘণ্টা বিনোদন মূলক কাজের স্ক্রিনে থাকে 9 থেকে 11 ঘন্টা ঘুমায় এবং কমপক্ষে 1 ঘন্টা শারীরিক কর্মকাণ্ড করে তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা যারা এগুলো মেনে চলে না সেসব শশুর তুলনায় অনেক বেশী ভাল থাকে
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন 18 মাস বয়স হওয়ার আগে শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস দেখা উচিত নয়। গবেষকরা বলছেন এই বয়সের শিশুরা ডিভাইসে বেশি থাকলে তাদের ভাষা শিখতে বা কথা বলতে দেরি হতে পারে এবং তারা মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারে না এমনকি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে
এছাড়া শিশুরা মোবাইল ডিভাইস এবং সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মনোযোগহীনতা এবং নিয়ন্ত্রনহীন আবেগ দেখা দেয়।
আরও পড়ুনঃ হঠাত যদি দাঁতে যন্ত্রণা ওঠে কি করবেন?
• বিষন্নতা ও উদ্বেগ
ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয় বেশি পরিমাণে টেলিভিশন দেখার কারণে শিশু এবং তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয় এ কারণে তাদের মধ্যে নিজেকে মূল্যহীন মনে হওয়া আত্মমর্যাদা কমে যাওয়া এবং তাদের মধ্যে মন খারাপ তৈরি হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়
আর যারা কম্পিউটার ব্যবহার টিভি দেখা এবং ভিডিও গেমস খেলার প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক কষ্ট উদ্বেগ এবং বিষন্নতা দেখা দেয়।
• বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা কমে যায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান এর অধ্যাপক ডঃ মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেন মানুষ যখন বেশি সময় ধরে স্ক্রিনের সামনে থাকে তখন সে এক ধরনের পরোক্ষ গ্রহীতা বা প্রেসিভিসিবার হয়ে যায়
ফলে তার সামনে যদি এমন কোনো কনটেন্ট আসে যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না আর সে যদি সেগুলো গ্রহণ এই অবস্থা হয়ে পড়ে তাহলে তার স্বাভাবিক বুদ্ধি বিদ্ধি ক্ষমতা কমে যায় একসময় সে আর কঠিন কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে।
• কি করবেন?
এতক্ষণ যেসব শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কথা আমরা জানলাম সেগুলো থেকে মুক্তি পেতে হলে কি করতে হবে এমন প্রশ্নের একটাই উত্তর আর তাহলো স্ক্রিন টাইম কমাতে হবে।
ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসকো পরিচালিত এক গবেষণা বলছে মানুষ যদি প্রতিদিন 2 ঘন্টা স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনে তাহলে সাধারন মৃত্যুহার 5.62 ভাগ এবং হূদরোগ থেকে মৃত্যুরহার 7.97 ভাগ কমিয়ে আনা যায়। তাহলে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনতে হলে কি করা যেতে পারে?
আরও পড়ুনঃ শাক-সাবজি দীর্ঘদীন তাজা রাখার উপায় জানুন
• পরিকল্পনা করুন বা লক্ষ ঠিক করুন
স্ক্রিন টাইম কমাতে হলে শুরুতেই যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে অবসর সময় আপনি কি করবেন তার জন্য পরিকল্পনা করুন বা একটি লক্ষ্য ঠিক করুন যেমন গল্পের বই পড়া পরিবারের সদস্যদের কাজে সাহায্য করা নতুন কিছু শেখা কোন শখ থাকলে সেই সম্পর্কিত কাজ করা ইত্যাদি নান বিষয় বিষয়ে পরিকল্পনার অংশ হতে পারে এসব কাজে জড়িয়ে পড়লে দেখা যাবে যে আপনার স্ক্রিন টাইম এমনিতেই কমে যাচ্ছে।
• স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন
ছোটদের উৎসাহিত করতে পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্কদের স্ক্রিন টাইম কমানো উচিত আপনার শিশু কখন কতক্ষণ ধরে স্ক্রিনে থাকবে তা ঠিক করুন। আমেরিকার অ্যাসোসিয়েশন অফ পেডিয়া থ্রেক্স তাদের নিতিমালায় বলেছে যে 18 মাসের কম বয়সী শিশুদের ভিডিও চ্যাট ছাড়া আর কোন ধরনের স্ক্রিন টাইম থাকা উচিত নয়।
2 বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের কিছু ডিজিটাল মিডিয়া সাথে পরিচিত করাতে পারেন তবে এক্ষেত্রে শিশুরা যা দেখবে সেগুলো অব্যশই ডিজিটালি উচ্চমান সম্পন্ন হতে হবে।
2- 5 বছর বয়সীরা দিনে 1 ঘন্টা উচ্চমান সম্পন্ন ভিডিও দেখতে পারে তবে এক্ষেত্রে বাবা-মাকে সাথে থাকতে হবে। আর 6 বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে খিয়াল রাখতে হবে যে স্ক্রিন টাইমের কারণে শিশুর ঘুম এবং শরীরিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয়।
• পরিবারের সাথে সময় কাটান
নিজে স্ক্রিনের বাইরে থাকতে চান কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে যদি এ অভ্যাস থেকে থাকে এবং তা যদি আপনি দুর করতে চান তাহলে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর বিকল্প নেই এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন কাজ যেমন রান্না করা বাগান করা শারীরিক ব্যায়াম করা এগুলো পরিবারের সবাই মিলে করতে পারেন এছাড়া অবসরের সবাই মিলে ঘুরতেও যেতে পারেন
আর আপনার শিশুকে সময় দিলে তার স্বাভাবিক মানসিক বিকাশেও মজবুত হবে। বাসার নির্দিষ্ট একটি স্থান নির্বাচন করুন যেখানে সব ধরনের ডিভাইস কিংবা মিডিয়া ব্যবহার করার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এটি হতে পারে আপনার শোয়ার ঘর এতে করে ঘুমেরও সমস্যা থাকলে সেটিও দুর হয়ে যাবে।
• ঘুমের দিকে লক্ষ রাখুন
ঘুমানোর 1 ঘন্টা আগে থেকে স্ক্রিন টাইম বন্ধ করতে হবে যাতে করে মস্তিষ্ক ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। ভালো ঘুমের জন্য প্রশান্ত পরিবেশ এবং সহনীয় মাত্রার আল খুবই দরকারি এছাড়ও শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুম খুব দরকারী।
• চশমা ব্যবহার করুন
যদি এমন হয় ইমারজেন্সি কোন প্রয়োজনে বা করোনার চলাকালীন অফিসের কাজগুলো মোবাইলে বা কম্পিটারের সামনে বসে করতে হচ্ছে তাহলে এক্ষেত্রে আপনি চাইলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলে চোখের সুরক্ষায় একটি গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।
এতে ফোন ও কম্পিটারের স্ক্রিন থেকে বের হওয়া রশ্মিনী থেকে আপনার চোখের সুরক্ষা মিলতে পারে। তবে যত কম ব্যবহার বা কম্পিটারের সামনে বসা যায় ততই ভালো
• আলো জালানো
যদি কোন প্রয়োজনে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন বা ডিভাইস ব্যবহার করাই লাগে তাহলে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে না বসে আলো যুক্ত ঘরে বসে ব্যবহার করুন। এতে করে কম্পিটার বা মোবাইল থেকে বের হওয়া ক্ষতিকারক রশ্মিনী সরাসরি চোখে লাগতে পারবেন না।
• বিরতি দিন
এক নাগারে ডিভাইস ব্যবহার না করে ব্যবহারের মাঝে মাঝে 30 সেকেন্ড বা 1 মিনিটের জন্য বিরতি দিন। অর্থাৎ কিছুক্ষণ ডিভাইস ব্যবহারের পরে 30 সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ রাখুন বা অন্যদিকে তাকান। তাহলে চোখ ভালো থাকবে। এছাড়াও চাইলে 30 মিনিট পরপর 5 মিনিটের জন্য বিরতি নিদে পারেন। এটিও আপনার চোখের সুরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
• হাঁটুন
স্বাস্থ্য বিষায়ক গবেষকরা বলছেন স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ওই সময়টা যদি স্বাস্থ্যসম্মত কোনো অভ্যাস যেমন হাঁটা বা জগিং করা যায় তাহলে তা মানসিক এবং শারীরিক দু দিক থেকে উপকারী হয় তাই সুস্থ থাকতে হলে হাঁটুন, ব্যায়াম করুন স্ক্রিনের বাইরে সময় কাটান।
আপন কি জানতে চান কোন খাবার গুলো আপনার চোখের জন্য উপকারী? বা রাসূল (সা:) চোখ ভালো রাখতে কোন উপদেশ দিয়েছেন? তাহলে অব্যশই কমেন্ট করে জানাবেন। তাহলে আমরা খুব দ্রুত সেই পোস্টি নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন নানা ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য শর্টটেক বাংলা ওয়েবসাইটে নজর রখুন এবং এখানে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক পেইজ এ যুক্ত থাকুন ধন্যবাদ।
• টপিক ট্যাগ
✖️স্ক্রিন টাইম কি?
✖️স্ক্রিন টাইম থেকে বাঁচার উপায়
✖️চোখের অসুখ ও প্রতিকার
✖️চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
✖️চোখ ভালো রাখার উপায়
✖️স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনার উপায়
✖️চোখের যত্ন ✖️চোখের সুরক্ষা
✖️চোখে কম দেখা